কালোজিরার উপকারিতা – আপনারা সবাই কালোজিরা নামটি শুনে থাকবেন। কিন্তু এই কালোজিরার অষুধি গুনাগুন সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন না। আমাদের গুরুজনেরা বলে থাকবেন কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। কিন্তু সে উপকারিতা গুলো কি কি আপনারা তা জানেন না। তাই আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো কালোজিরার অষুধি গুনাগুন সম্পর্কে।
কালোজিরা হচ্ছে একটি খুবই উপকারী একটি ঔষধি এবং মসলা জাতীয় খাদ্য। এটি আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ খাবারে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে। তবে আপনারা হয়তোবা যেন অবাক হবেন যে এর উপকারিতা বিশাল যে তা বলে শেষ করা সম্ভব হবে না। তো কালোজিরার উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের এই পোস্টটি সম্পুর্ণ ভালভাবে দেখুন।
কালোজিরার উপকারিতা
আপনাদের মধ্যে হয়তোবা অনেকেই অপেক্ষা করছেন যে কালোজিরার উপকারিতা গুলো কি কি তা জানতে। আমরা এই সকল উপকারিতাগুলো নিচে আপনাদেরকে ব্যাখ্যা করব। তো কালোজিরার উপকারিতা অনেক বড় একটি ব্যাখ্যা হতে চলেছে আমাদের এই পোস্টটিতে। তাই চলুন আর কথা না বাড়িয়ে কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক:
কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি
কালোজিরা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। এক পাতা পুদিনা পাতা রস বা চায়ের মধ্যে এক চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে প্রতিদিন ৩ বার করে খেতে হবে। এর ফলে আপনার মাথা ঠান্ডা থাকবে। মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করবে। আপনার মাথার স্মৃতিশক্তি খুবই ভালো হবে। এর ফলে আপনার ঘুম ভালো হবে।
হার্টের সমস্যার সমাধানে
হার্টের সমস্যা সমাধানে এক কাপ দুধের সাথে, এক টেবিল চামচ কালো জিরার গুঁড়ো মিশিয়ে দিনে ৩ বার করে ২ মাস খেলে আপনি ভালো রকমের উপকার পাবেন। আপনার হার্টের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে এই ভাবে কালোজিরা খেলে।
পাইলস সমস্যা সমাধানে
এক টেবিল চামচ মাখন এবং এক টেবিল চামচ কালোজিরার তেল এবং এক টেবিল চামচ তিলের তেল মিশিয়ে সকালে নিয়মিত খালি পেটে খেতে হবে অন্তত ১-২ মাস। এর ফলে আপনার পাইলসের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে এমনকি ছেড়ে যেতে পারে।
শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগ নিরাময়
আমরা যারা শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগে আক্রান্ত তারা এই নিয়মটি পালন করতে পারেন। প্রতিদিন আপনার খাদ্যতালিকায় নিয়মিত কালোজিরা বাটা রাখুন। এর ফলে আপনি অতি দ্রুত শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। এজাতীয় রোগের কালোজিরা হচ্ছে একটি অপ্রতিরোধ্য ঔষধ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই রোগকে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আমাদের কোন সমস্যায় হয় না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিদিন এক চিমটি কালোজিরা একগ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খাবেন। এতে করে আপনার শরীরে রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যার ফলে আপনার শরীরে ডায়াবেটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অনিয়মিত মাসিক সমস্যা সমাধানে
এক কাপ কাঁচা হলুদের রসের সাথে এক কাপ আতপ চালের ধোয়া পানির সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে নিয়মিত খেলে এই সমস্যার সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ।
বুকের দুধ বৃদ্ধিতে
অনেক মায়ের সন্তান হওয়ার পর বুকে দুধ আসে না, তাদের জন্য কালোজিরা হচ্ছে একটি মহা অষুধ। যেসব মায়েদের বুকের দুধ আসে না তারা প্রতিরাতে এক টেবিল চামচ কালোজিরা দুধের সাথে মিশিয়ে খাবেন। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আপনার বুকের দুধের পরিমাণ বা প্রবাহ অনেক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে
২ বছরের উর্ধ্বে বয়সী শিশুদের নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করা উচিৎ। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শিশুর শারীরিক গঠন ভালো হয়। তাছাড়াও শিশুর স্মরণশক্তি ও মানসিক বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে। কিন্তু দুই বছরের নিচে বয়সী শিশুদের কে কালোজিরা খাওয়ানো উচিৎ নয়। এতে শিশুদের সমস্যা হতে পারে। তাই দুই বছর বয়সের ঊর্ধ্বে বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করানো উচিৎ।
মধু কালোজিরার উপকারিতা
মধুর সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খাওয়ার অনেক গুণ রয়েছে। সব গুনাগুন বলতে শুরু করলে শেষ করা সম্ভব হবে না। তবুও আমরা আপনাদের জন্য সবচেয়ে সেরা সেরা কিছু গুনাগুন নিচে আলোচনা করব। তাই মধু কালোজিরার উপকারিতা জানতে হলে আমাদের সঙ্গে থাকুন। মধু খাওয়ার রয়েছে অনেক উপকারিতা।
সর্দি সারাতে
আমাদের দেশে সর্দির সমস্যা হচ্ছে একটি সার্বজনীন সমস্যা। ১ টেবিল চা-চামচ কালোজিরা এর তেল ও ১ টেবিল চা চামচ মধু এক কাপ চায়ের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত দিনে তিনবার খেতে হবে। এছাড়াও সর্দি সেরে না যাওয়া পর্যন্ত মাথায় ও ঘাড়ে কালোজিরা মালিশ করতে হবে। এছাড়াও ১ টেবিল চা চামচ তুলসী পাতার রসের সাথে এক চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে খেলেও সর্দি, কাশি এবং জ্বর সেরে যাবে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে
এক চামচ মধু এবং এক চামচ কালোজিরা মিশিয়ে প্রতিদিন দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে হবে নিয়মিত। এতে করে আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে এবং কালোজিরা শরীর মালিশ করে আধঘন্টা রোদে বসে থাকতে হবে থাকতে হবে। এতে আপনার শরীরের ব্লাড প্রেসার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
যৌন সমস্যার সমাধানে
মধু এবং কালোজিরার তেলের সাথে এক টেবিল চামচ মাখন এবং এক টেবিল চামচ জয়তুনের তেল মিশিয়ে প্রতিদিন তিনবার খাবেন। এইভাবে খেলে ১-২ মাসের মধ্যে আপনি সুফল পাবেন। কালোজিরা পুরুষের শরীরে মধ্যে স্পার্ম বৃদ্ধি করে। কালোজিরা পুরুষ ও মহিলা উভয়ই যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং যৌন সমস্যা সমাধান করে।
আমাশয় নিরাময়ে
এক টেবিল চামচ মধুর সাথে এক টেবিল চামচ কালোজিরা মিশিয়ে নিয়মিত দিনে ২-৩ বার করে একমাস খেলে অনেক উপকার পাবেন। এতে করে আপনার আমাশয় সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
কালোজিরার উপকারিতা হাদিস
প্রাচীনকাল থেকে কালিজিরা মানবদেহের নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাই বিস্ময়কর এই জিনিসটির প্রশংসা করেছেন আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কালিজিরায় সকল প্রকার রোগের উপশম আছে, তবে ‘আস্সাম’ ব্যতীত। আর ‘আস্সা-ম’ হলো মৃত্যু। এর ‘আল হাব্বাতুস্ সাওদা’ হলো (স্থানীয় ভাষায়) ‘শূনীয’ (অর্থাৎ কালিজিরা)। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৫৯)
এ কারণেই হয়তো সাহাবায়ে কেরাম সব সময় সঙ্গে কালিজিরা রাখার পরামর্শ দিতেন। খালিদ ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের অভিযানে) বের হলাম। আমাদের সঙ্গে ছিলেন গালিব ইবনে আবজার। তিনি পথে অসুস্থ হয়ে গেলেন। এরপর আমরা মদিনায় ফিরলাম, তখনো তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে দেখাশোনা করতে আসেন ইবনে আবি আতিক। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা এ কালিজিরা সঙ্গে রেখো। এর থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে জয়তুনের কয়েক ফোঁটা তেল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এদিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবিষ্ট করাবে। কেননা আয়েশা (রা.) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, এই কালিজিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ওষুধ। আমি বললাম, ‘সাম’ কী? তিনি বললেন মৃত্যু। (বুখারি, হাদিস : ৫৬৮৭)
পবিত্র হাদিসে যেহেতু রাসুল (সা.) এই জিনিসটি সব রোগের মহৌষধ বলেছেন, তাই বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে বাঁচতে সতর্কতামূলক আমাদের খাবারের মেন্যুতে কালিজিরা যোগ করা যেতে পারে। এতে করে অন্তত রাসুল (সা.) এর সুন্নত আদায় হবে।
(Source: Internet)
পোস্টটি প্রথম প্রকাশিত হয় এইখানে
The post কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/nRab0vr
via IFTTT
Comments
Post a Comment